বাংলার তাঁতের কাপড়ের সুখ্যাতির জন্য কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত একদিন লিখেছিলেন,
“বাংলার মসলিন বাগদাদ রোম চিন
কাঞ্চন তৌলেই কিনতেন একদিন”…

তাঁত হচ্ছে এক ধরণের যন্ত্র যা দিয়ে তুলা বা তুলা হতে উৎপন্ন সুতো থেকে কাপড় বানানো যায়। তাঁত বিভন্ন রকমের হতে পারে। খুব ছোট আকারের হাতে বহন যোগ্য তাঁত থেকে শুরু করে বিশাল আকৃতির স্থির তাঁত দেখা যায়। আধুনিক বস্ত্র কারখানা গুলোতে স্বয়ংক্রিয় তাঁত ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সাধারণত তাঁত নামক যন্ত্রটিতে সুতা কুণ্ডলী আকারে টানটান করে ঢুকিয়ে দেয়া থাকে। লম্বালম্বি সুতাগুলিকে “টানা” এবং আড়াআড়ি সুতাগুলিকে “পোড়েন” বলা হয়। যখন তাঁত চালু করা হয় তখন নির্দিষ্ট সাজ অনুসারে সুতা টেনে নেয়া হয় এবং সেলাই করা হয়। তাঁতের আকার এবং এর ভেতরের কলা কৌশল বিভিন্ন রকমের হতে পারে। বাংলা তাঁত যন্ত্রে ঝোলানো হাতল টেনে সুতো জড়ানো মাকু (spindle) আড়াআড়ি ছোটানো হয়। মাকু ছাড়াও তাঁতযন্ত্রের অন্যান্য প্রধান অঙ্গগুলি হল – “শানা”, “দক্তি” ও “নরাজ”। শানার কাজ হল টানা সুতার খেইগুলিকে পরস্পর পাশাপাশি নিজ নিজ স্থানে রেখে টানাকে নির্দিষ্ট প্রস্থ বরাবর ছড়িয়ে রাখা। শানার সাহায্যেই কাপড় বোনার সময় প্রত্যেকটি পোড়েনকে ঘা দিয়ে পরপর বসানো হয়। শানাকে শক্ত করে রাখার কাঠামো হল দক্তি। একখানি ভারী ও সোজা চওড়া কাঠে নালী কেটে শানা বসানো হয় আর তার পাশ দিয়ে কাঠের উপর দিয়ে মাকু যাতায়াত করে। শানাটিকে ঠিক জায়গায় রাখার জন্য তাঁর উপরে চাপা দেওয়ার জন্য যে নালা-কাটা কাঠ বসানো হয় তাঁর নাম “মুঠ-কাঠ”। শানা ধরে রাখার এই দুখানি কাঠ একটি কাঠামোতে আটকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই সমগ্র ব্যবস্থাযুক্ত যন্ত্রটির নাম “দক্তি”।শানায় গাঁথা আবশ্যকমত প্রস্থ অনুযায়ী টানাটিকে একটি গোলাকার কাঠের উপর জড়িয়ে রাখা হয়, একে বলে টানার “নরাজ”। আর তাঁতি যেখানে বসে তাঁত বোনেন, সেখানে তাঁর কোলেও একটী নরাজ থাকে- তাঁর নাম “কোল-নরাজ”। টানার নরাজের কাজ হল টানার সুতাকে টেনে ধরে রাখা আর কোল-নরাজের কাজ হল কাপড় বোনার পর কাপড়কে গুটিয়ে রাখা।